গাড়িতে উঠে বমি ভাব
Freepik freepik

গাড়িতে উঠে বমি ভাব? জানুন এর কারণ ও লক্ষণ এবং এটি কমানোর টিপস।

গাড়িতে উঠে বমি ভাব বা “মোশন সিকনেস” (Motion Sickness) একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন মানুষের মধ্যে দেখা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা গাড়িতে, বাসে, ট্রেনে বা অন্য কোনো যানে ভ্রমণ করে। এটি এমন একটি শারীরিক অবস্থার নাম, যেখানে শরীরের ভেতরে থাকা ভারসাম্য ব্যবস্থা (ব্যালেন্স সিস্টেম) বাইরে থেকে আসা আন্দোলনের সাথে সঠিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ থাকতে পারে না, যার ফলে বমি ভাব, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি এবং অস্বস্তির অনুভূতি হয়। গাড়িতে ওঠার সময় এই সমস্যাটি অনেকের জন্য খুবই প্রচলিত এবং এটি মোটর ভ্রমণের সময় অনেকের জন্য এক ধরনের অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।

গাড়িতে ওঠার সময় বমি ভাবের কারণ

গাড়িতে উঠলে বমি ভাব হওয়ার প্রধান কারণ হলো আমাদের শরীরের ভারসাম্য ব্যবস্থা। আমাদের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে চোখ, কান এবং অন্যান্য অংশের মাধ্যমে মস্তিষ্ক তথ্য সংগ্রহ করে। যখন আমরা গাড়িতে বসে থাকি, তখন চোখ ও শরীরের অন্য অংশগুলোর কাছে যাত্রার পরিবেশের একটি ভিন্ন ধরণ পৌঁছায়। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের চোখ গাড়ির ভিতরের দৃশ্য দেখে, কিন্তু শরীর অনুভব করে গাড়ির গতির পরিবর্তন বা ঝাঁকুনি। এই দুটি ভিন্ন ধরনের তথ্য একসাথে মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং মস্তিষ্ক সঠিকভাবে সেগুলোকে প্রক্রিয়া করতে না পারলে সৃষ্ট হয় বমি ভাব, মাথা ঘোরা, এবং অস্বস্তি।

এছাড়া, আমাদের কানেও ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বিশেষ সিস্টেম রয়েছে, যেটি মস্তিষ্ককে সংকেত পাঠায়। যদি গাড়ি দ্রুত বাঁকে, সামনে বা পিছনে সরে বা ঝাঁকুনি দেয়, তাহলে কানের ভেতরে অবস্থিত সেমিসির্কুলার ক্যানালগুলো (semicircular canals) এই তথ্য পাঠায়, কিন্তু যখন চোখের মাধ্যমে আমরা কোনো শারীরিক আন্দোলন দেখতে পাই না, তখন এই দুই তথ্যের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়, যা মোশন সিকনেস বা গাড়িতে ওঠার সময় বমি ভাব সৃষ্টি করে।

মোশন সিকনেসের লক্ষণসমূহ

গাড়িতে উঠে বমি ভাব

গাড়িতে ওঠার সময় বা যেকোনো ধরনের যানে ভ্রমণ করার সময় কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এরা হলো:

  1. বমি ভাব: এটি মোশন সিকনেসের প্রধান লক্ষণ, যেখানে বমি করার অনুভূতি অত্যন্ত তীব্র হতে পারে।
  2. মাথা ঘোরা: গাড়ির গতির সাথে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সমস্যা হলে মাথা ঘুরানো অনুভূতি হতে পারে।
  3. ঘাম বেড়ে যাওয়া: অতিরিক্ত ঘাম হওয়া এবং অস্বস্তি অনুভূতি।
  4. শক্তির অভাব বা ক্লান্তি: শরীরের সঠিক ভারসাম্য না পেলে ক্লান্তি অনুভূতি হয়।
  5. পেটের অস্বস্তি: গ্যাস, অম্বল, বা পেটের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  6. অনিদ্রা বা অস্বস্তি: দীর্ঘ ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।

মোশন সিকনেসের জন্য কারণসমূহ

কিছু মানুষের মধ্যে মোশন সিকনেস বা গাড়িতে বমি ভাব হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, এর পিছনে কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে:

  1. হরমোনাল পরিবর্তন: মহিলাদের মধ্যে গর্ভাবস্থা, মাসিক চক্রের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মোশন সিকনেস হতে পারে।
  2. উচ্চ মানসিক চাপ বা উদ্বেগ: মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা শারীরিক অস্বস্তি মোশন সিকনেসের লক্ষণকে তীব্র করে তুলতে পারে।
  3. দীর্ঘ সময় ভ্রমণ: দীর্ঘ সময় ধরে গাড়িতে বা অন্য যানে ভ্রমণ করলে এটি আরও বেশি হতে পারে।
  4. বিশেষ কিছু খাবারের প্রভাব: ভারী খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার, বা অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার মোশন সিকনেস বৃদ্ধি করতে পারে।
  5. বয়স: সাধারণত ছোট বয়সের শিশুদের মধ্যে মোশন সিকনেস বেশি হয়। তবে কিছু বয়স্ক মানুষের মধ্যেও এটি দেখা যায়।

গাড়িতে ওঠার সময় বমি ভাব কমানোর কিছু টিপস

এটি অনেকের জন্য এক অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ কৌশল রয়েছে যা মোশন সিকনেস কমাতে সাহায্য করতে পারে:

  1. যানবাহনের সামনে বসুন: গাড়ির সামনে বা উইন্ডো সিটে বসলে বাহ্যিক গতিবিধি দেখতে পাওয়া যায় এবং শরীরের সঠিক সংকেত প্রাপ্তি সহজ হয়।
  2. বিশেষ দৃষ্টিকোণ তৈরি করুন: যাত্রার সময় গাড়ির জানালার বাইরে কোনো স্থির বস্তু দেখুন। এতে শরীরের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সংকেতের মধ্যে সমন্বয় আসতে সাহায্য করবে।
  3. গাড়ির গতি কমান: গাড়ির গতিবিধি এবং ঝাঁকুনি কমানো হলে মোশন সিকনেস কম হতে পারে।
  4. গা-ঢাকা বা ভারী খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন: ভ্রমণের আগে খুব ভারী খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন না, হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খান।
  5. গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস: গভীর শ্বাস নেওয়া ও শিথিল হওয়া মোশন সিকনেসের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  6. প্রাকৃতিক প্রতিকার: আদা বা মেন্থল যুক্ত মিষ্টি বা চা মোশন সিকনেসের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  7. বিশেষ মেডিকেশন: কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিহিস্টামিন, যা সাধারণত পিপঁড়ের কামড় বা ঠাণ্ডার জন্য ব্যবহৃত হয়, মোশন সিকনেসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে। তবে এগুলো ডাক্তারের পরামর্শে নেওয়া উচিত।

গাড়িতে ওঠার সময় বমি ভাব বা মোশন সিকনেস এক অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হতে পারে, তবে এটি একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা এবং বিভিন্ন উপায়ে এর উপসর্গগুলি কমানো সম্ভব। কিছু সহজ পদ্ধতি যেমন সঠিক স্থানে বসা, শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ, ভারী খাবার থেকে বিরত থাকা এবং প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবহার করার মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবেলা করা যেতে পারে। তবে যদি এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়ে ওঠে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

More From Author

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দল প্রয়োজন: সারজিস আলম

স্মার্টফোন কেনার আগে যে বিষয় গুলি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন

স্মার্টফোন কেনার আগে যে বিষয় গুলি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *