পুতিনকে ট্রাম্পের পরামর্শ
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, ফোনালাপে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ‘ইউরোপে ওয়াশিংটনের উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতির’ কথা স্মরণ করিয়ে দেন
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে রোববার জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। ট্রাম্প পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধ না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং তাকে ‘ইউরোপে ওয়াশিংটনের বিশাল সামরিক উপস্থিতির’ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘একদিনের মধ্যেই’ যুদ্ধ শেষ করার একটি সমাধান খুঁজে বের করবেন, কিন্তু কীভাবে তা করবেন তা ব্যাখ্যা করেননি।
বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেছেন ট্রাম্প। শুক্রবার ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি মস্কোর দাবি পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক।
১৪ জুন, পুতিন যুদ্ধ অবসানের জন্য তার শর্ত নির্ধারণ করেছিলেন: ইউক্রেনকে তার ন্যাটো উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং রাশিয়ার দাবি করা চারটি অঞ্চলের সমস্ত অঞ্চল থেকে তার সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
ইউক্রেন তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে এটি আত্মসমর্পণের সমতুল্য হবে এবং জেলেনস্কি একটি “বিজয় পরিকল্পনা” পেশ করেছেন যার মধ্যে পশ্চিমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সামরিক সহায়তার অনুরোধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রবিবার ট্রাম্পের চারপাশে “ইতিবাচক” সংকেতের কথা উল্লেখ করেছেন, যদিও রিপাবলিকান মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের চেয়ে “কম অনুমানযোগ্য”।
“তিনি বিশ্বাস করেন যে তিনি এমন একটি চুক্তি করতে পারবেন যা শান্তির দিকে নিয়ে যাবে,” রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম রসিয়া ১-এর ক্রেমলিন সংবাদদাতাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন পেসকভ। অন্তত তিনি শান্তির কথা বলেন; তিনি সংঘাতের কথা বলেন না বা রাশিয়াকে কৌশলগত পরাজিত করতে চান না।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার বলেছেন, জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক স্থাপনের প্রাথমিক কাজ চলছে, যার সময় স্পষ্ট নয়।
এদিকে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুরাখোভে রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে, রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থাগুলি রাষ্ট্র পরিচালিত তাস নিউ এজেন্সিকে জানিয়েছে, ক্রেমলিনের সৈন্যরা এমন এক সময়ে তাদের স্থল সুবিধা চাপার চেষ্টা করছে যখন উভয় পক্ষই ড্রোন উৎক্ষেপণ জোরদার করেছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ওই এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছে এমন কোনো প্রমাণ ছাড়াই সংস্থাগুলো জানিয়েছে, শহরটির ‘শহুরে লড়াই চলছে’।
শনিবার ইউক্রেনের কমান্ডার ইন চিফ ওলেকসান্দার সিসরসি এক ফেসবুক পোস্টে কুরাখোভ ও পোকরোভস্কের আশেপাশের এলাকাগুলোর পরিস্থিতিকে ‘চ্যালেঞ্জিং’ এবং ‘উত্তেজনা বৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হচ্ছে’ বলে অভিহিত করেছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়ার দ্রুত স্থল অগ্রসর হওয়ার ফলে একসময় ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চলের দক্ষিণাঞ্চল দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সেলিডোভ শহর দখলের পর ক্রেমলিনের সেনারা দক্ষিণ দোনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক হাব কুরাখোভে লক্ষ্য নিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখা পর্যবেক্ষণ প্ল্যাটফর্ম ডিপ স্টেটের মতে, শহরটিকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে পুতিনের সেনারা দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের কয়েক মাইল দূরে গ্রামগুলোর কাছাকাছি অগ্রসর হয়েছে।
ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ জানিয়েছে, শুধু রোববারই কুরাখোভের আশপাশের অন্তত আটটি বসতিতে রাশিয়ার ৩৯টি হামলা হয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অপারেশনাল পোস্টে শহরের অভ্যন্তরে রাস্তায় মারামারির বিষয়ে কোনও উল্লেখ করা হয়নি।
অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার অগ্রগতির গতি বেড়েছে, যা দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরো দক্ষিণাঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও মস্কোর সৈন্যরা তাদের “মাংস-গ্রাইন্ডিং” পদ্ধতির কারণে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তবুও তারা ইউক্রেনের বাহিনীকে ছাড়িয়ে গেছে এবং হাজার হাজার উত্তর কোরিয়ার সৈন্যের রাশিয়ায় আগমনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়েছে।
রবিবার পৃথকভাবে, ইউক্রেন প্রায় তিন ডজন ড্রোন দিয়ে মস্কো অঞ্চলে আক্রমণ করেছিল, যার ফলে রাশিয়ার রাজধানীর আশেপাশের বিমানবন্দরগুলিতে কয়েক ঘন্টার জন্য ফ্লাইট বন্ধ ছিল, যখন রাশিয়ান ড্রোনের একটি বড় তরঙ্গ ইউক্রেনকে লক্ষ্য করেছিল।
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের টিকিয়ে রাখা ইউএভি ব্যারেজটি ‘রেকর্ড ১৪৫টি শাহেদ এবং অন্যান্য স্ট্রাইক ড্রোন’ ছিল। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে রাশিয়া ৮০০টিরও বেশি গাইডেড এরিয়াল বোমা, প্রায় ৬০০ স্ট্রাইক ড্রোন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
