বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ যে স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তার অন্যতম প্রধান ভরসা হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষ পরিবার ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য ঘাম ঝরাচ্ছেন বিদেশের মাটিতে। তাদের এই অবদানকে আরও ফলপ্রসূ করতে সরকার সম্প্রতি কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা প্রবাসীদের জন্য একদিকে আশার আলো জাগাচ্ছে, আবার অন্যদিকে প্রশ্নও তুলছে—এসব উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হবে?
রেমিট্যান্সে নতুন প্রণোদনা
সরকার বলছে, বৈধ চ্যানেলে পাঠানো প্রতিটি রেমিট্যান্সে এখন আরও বেশি সুবিধা দেওয়া হবে। এর ফলে হুন্ডির মতো অবৈধ পথ বন্ধ হয়ে আসবে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ আরও স্থিতিশীল হবে। প্রবাসীরা অতিরিক্ত ২.৫% প্রণোদনা পাবেন, যা ছোট পরিমাণ অর্থ পাঠানো শ্রমজীবীদের জন্য বড় সহায়তা হয়ে উঠবে।
সহজ হবে ঋণ ও ব্যাংকিং সেবা
অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে ছোট ব্যবসা শুরু করতে চান, কিন্তু ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়েন। সরকার নতুন নীতিতে বলছে, প্রবাসীরা সহজ শর্তে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। এটি শুধু প্রবাসী নয়, তাদের পরিবারের জন্যও একটি বড় সুযোগ তৈরি করবে।
প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর যে সংখ্যক মানুষ বিদেশে যান, তাদের অনেকেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া পাড়ি জমান। এর ফলে ভালো চাকরি বা উপযুক্ত বেতন পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। নতুন উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আধুনিকায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এতে প্রবাসীরা বিদেশে গিয়ে আরও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারবেন, ফলে আয়ও বাড়বে।
ডায়াসপোরা নীতি: জ্ঞানের রেমিট্যান্স
প্রবাসীরা শুধু অর্থ পাঠান না, তারা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও নতুন চিন্তাভাবনাও অর্জন করেন। সরকারের প্রস্তাবিত “ডায়াসপোরা নীতি” অনুযায়ী, প্রবাসীরা তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবেন। এটি যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে শুধু টাকার রেমিট্যান্স নয়, জ্ঞানের রেমিট্যান্সও বাংলাদেশকে শক্তিশালী করবে।
চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা
তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা বাস্তবায়িত হবে? অনেক সময় সরকার পরিকল্পনা ঘোষণা করে, কিন্তু মাঠপর্যায়ে তা কার্যকর হয় না। প্রবাসীরা যেন সত্যিই সহজে ঋণ পান, প্রণোদনা পেতে যেন মাসের পর মাস অপেক্ষা না করতে হয়, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে—এসব বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি।